চিকলী ডেস্ক নিউজ : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি জানান, আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি একদিনেই অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট। এই তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়েই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিয়ন্ত্রণে গেছে কিছু ক্ষমতা।
নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সংবিধান এবং আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে কিছু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) এর ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচনের সময়সূচি জারি হওয়ার পর থেকে ফল ঘোষণার পর ১৫ দিন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ব্যতিরেকে বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং তাদের অধীন কর্মকর্তাদের অন্যত্র বদলি করা যাবে না।

সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ এবং আরপিওর ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচনের কাজে সহায়তা দেওয়া নির্বাহী বিভাগের কর্তব্য। আর এই বিধান সাধারণত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর কার্যকর হয়ে থাকে।
এদিকে গত রবিবার (৭ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনের সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আচরণবিধি প্রতিপালন ও নিশ্চিত করার জন্য তফসিল ঘোষণার পরদিন থেকে প্রতিটি উপজেলা বা থানায় দুজন করে ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করবেন। ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা শেষ পাঁচ দিন, অর্থাৎ নির্বাচনের আগের তিন দিন, নির্বাচনের দিন ও নির্বাচনের পরের দিন বেড়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনি এলাকায় সোশ্যাল সেফটি নেটওয়ার্ক ছাড়া সব ধরনের অনুদান, ত্রাণ ইত্যাদি বিতরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। এ ছাড়া তফসিল ঘোষণার পর উপদেষ্টা পরিষদ নতুন কোনও প্রকল্প অনুমোদন করতে পারবে না।
অন্যদিকে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সব ধরনের বেআইনি ও অনুমোদনহীন জনসমাবেশ ও আন্দোলন থেকে বিরত থাকতে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই নির্দেশনা কেউ লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে ডিএমপি।
এছাড়া নির্বাচনের প্রয়োজনের কমিশন কোনও সহায়তা চাইলে সেটা সংশ্লিষ্ট দফতর কিংবা সরকার প্রতিপালন করতে বাধ্য থাকে বলেও জানা যায়।

এদিকে জাতির উদ্দেশে তফসিল ঘোষণার ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘জাতি হিসেবে আমাদের অমোঘ শক্তি হচ্ছে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের জন্য আমাদের ভালোবাসা ও আত্মত্যাগ। জাতির প্রত্যাশাকে ধারণ করে আমাদের সংবিধান রাষ্ট্রের উপর জনগণের একচ্ছত্র মালিকানা নিশ্চিত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল মালিকানা প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ হচ্ছে নির্বাচন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে মানসম্মত নির্বাচনের অনুপস্থিতি প্রায়শই আমাদের ঐতিহ্য এবং সামষ্টির প্রত্যাশাকে ম্লান করেছে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে আমাদের ভাই-বোন সন্তানদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে। আমাদের অঙ্গীকার হচ্ছে, একটি সুষ্ঠ ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান, যা জাতি হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে এবং বিশ্ব-দরবারে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা একই প্রত্যাশা ধারণ করেন এবং একই অঙ্গীকারে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবার জবাবদিহিতা বাড়াতে বহুবিধ আইনি ও কাঠামোগত সংস্কার শেষ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধিতে যথাযথ পরিবর্তন, সংশোধন ও পরিমার্জন করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের বিভিন্ন সুপারিশের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব মূল্যায়ন ও অংশীজনের পরামর্শের ভিত্তিতে এসব সংস্কার করা হয়েছে। এই উদ্যোগ সফলভাবে সম্পন্ন করতে সহযোগিতার জন্য আমি অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনসহ সব অংশীজনদের জানাই আমার কৃতজ্ঞতা।
উৎস : বাংলা ট্রিবিউন।


